Skip to main content
 

কক্সবাজার বিচার বিভাগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

কক্সবাজার জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

কক্সবাজার জেলার নামকরণ: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রাচীন নাম পালংকী। একসময় এটি প্যানোয়া নামে পরিচিত ছিল। প্যানোয়া শব্দটির অর্থ হলুদ ফুল। অতীতে কক্সবাজারের আশপাশের এলাকাগুলো এই হলুদ ফুলে ঝকমক করত। ইংরেজ অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এখানে একটি বাজার স্থাপন করেন। কক্স সাহেবের বাজার থেকে কক্সবাজার নামের উৎপত্তি। কক্সবাজারের অনন্য বৈশিষ্ট্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দীর্ঘ এই সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত।

সাধারণ ইতিহাস:

আরব ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ অষ্টম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলের রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হত। ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চন্দ্র চট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ। ১৬৬৬ সালে মুঘলরা চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। মুঘল সেনাপতি বুজুর্গ ওমেদ খান কর্ণফুলির দক্ষিণের মাঘ কেল্লা দখল করে নেন এবং আরাকানবাসী রামু কেল্লাতে আশ্রয় নেয়, যা কিনা পরে মুঘলরা হঠাৎ আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কক্সবাজারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাষীদের মাঝে জমি বিতরণের এক উদারনীতি পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে চট্টগ্রাম ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এই এলাকায় আসতে থাকে। বার্মা রাজ বোধাপায়া (১৭৮২-১৮১৯) ১৭৮৪ সালে আরাকান দখল করে নেন। প্রায় ৩০ হাজার আরাকানী বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য ১৭৯৯ সালে কক্সবাজারে পালিয়ে যায়। এদের পুনর্বাসন করতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হিরাম কক্সকে নিয়োগ দেয়। প্রতি পরিবারকে ২.৪ একর জমি এবং ছয় মাসের খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছিল। এ সময় ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যা কক্স সাহেবের বাজার পরিচিত হয় স্থানীয়দের মাঝে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তার অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকেই কক্সবাজার জেলার নামের উৎপত্তি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হিরাম কক্স ১৭৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

১৮৫৪ সালে কক্সবাজার থানা গঠিত হয় এবং ঐ বছরই কক্সবাজার, চকরিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ থানার সমন্বয়ে কক্সবাজার মহকুমা গঠিত হয়। পরে টেকনাফ থেকে উখিয়া, মহেশখালী থেকে কুতুবদিয়া এবং কক্সবাজার সদর থেকে রামু থানাকে পৃথক করে এই মহকুমার অধীনে তিনটি নতুন থানা গঠিত হয়। ১৯৫৯ সালে কক্সবাজার জেলাকে টাউন কমিটিতে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭২ সালে টাউন কমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ কক্সবাজার মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৩ এপ্রিল বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা থেকে পেকুয়া উপজেলাকে পৃথক করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি:

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী চকরিয়ায় ১৩ জন লোককে হত্যা করে এবং বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়। এসময় পাকবাহিনী টেকনাফ ডাকবাংলোতে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থেকে প্রায় ২৫০জন নিরীহ লোককে ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে।

কক্সবাজার বিচার বিভাগ:

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের ইতিহাস: কক্সবাজার মহকুমা থাকা অবস্থায় কক্সবাজারবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে বিচারপ্রার্থী মানুষের দুঃখ লাঘব করার জন্য গত ১৫/৩/১৯৮১ খ্রি : তারিখ চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১০০ (একশত) মাইল দূরে কক্সবাজার মহকুমার সদরে একটি সহকারী দায়রা ও সাব - জজ আদালত প্রতিষ্ঠা করে জনাব জালাল আহমদকে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয় । কক্সবাজার মহকুমা থেকে জেলা হিসেবে উন্নীত হওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে পৃথক হয়ে গত ১৫/০১/১৯৮৫ খ্রি : তারিখ কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় । জনাব মো : আব্দুর রব মোল্লাকে প্রথম জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দেয়া হয় এবং ১৫/০২/১৯৮৫ খ্রি : তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হয় । হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৮৮ সালে কক্সবাজারে প্রথমে একটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ স্থাপন করা হয় । মামলার আধিক্য বিবেচনা করে সরকার গত ১৬/১০/১৯৯৪ খ্রি : তারিখ কক্সবাজার ২য় সহকারী দায়রা ও সাব-জজ আদালত স্থাপন করে মো : দেওয়ান আলী রাজা-কে সাব-জজ , ২য় আদালত হিসেবে নিয়োগ দেন। সরকার ২৫/০১/২০০৩ খ্রি : তারিখে কক্সবাজারে ০১ ( এক) টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেন । পরবর্তীতে ১৮/০৪/২০১৮ খ্রি : তারিখে আরো ০২ ( দুই ) টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয় । প্রায় ১০০০ ( এক হাজার ) হত্যা মামলাসহ ৮৩,০০০ ( তিরাশি হাজার ) বিচারাধীন মামলার কথা বিবেচনা করে সরকার ২৫/০৯/২০২২ খ্রি : তারিখ আরো ০৪ ( চার ) টি নতুন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠা করে বিচারক নিয়োগ দেয়।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত:

কক্সবাজার জেলায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আলাদা কোন আদালত ভবন নেই। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর হতে অদ্যাবধি ০৮ জন বিচারক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন জনাব মুজিবুর রহমান। ১৯৫২ সনের জজ কোর্টের পুরাতন ভবনে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট কোর্টের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট সহ অন্যান্য ০৬ টি বিচারিক আদালতের কার্যক্রম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচতলায় পরিচালিত হচ্ছে। ০৩ টি চৌকি কোর্ট রয়েছে- চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া।

মহেশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত(চৌকি আদালত):

মহেশখালী ফৌজদারি আদালত ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৮৫ সনের দিকে। প্রায় ৭/৮ বছর ধরে আদালতের কার্যক্রম কক্সবাজার জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ভবনের নিচতলায় পরিচালিত হয়ে আসছে। বিগত ১৫/১১/২০০৭ খ্রিস্টাব্দ তারিখ হতে ০৮ জন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অত্র কোর্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (চৌকি আদালত):

চকরিয়া ফৌজদারি আদালকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮১ সালে। বর্তমান আদালত ভবনটি বিগত ১৯৮২ সালে নির্মাণ করা হয়। বিগত ৩১/১০/২০০৭ খ্রিস্টাব্দ তারিখ হতে ০৯ জন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অত্র কোর্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

কুতুবদিয়া চৌকি আদালত (সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত):

সাগরের বুকে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে জেগে উঠে সাগরকন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপটি। কথিত আছে, হযরত কুতুবুদ্দীন নামে এক কামেল ব্যক্তি আলী আকবর, আলী ফকিরসহ কিছু সঙ্গী নিয়ে মগ পর্তুগীজদের বিতাড়িত করে এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই দ্বীপের নামকরণ হয় কুতুবউদ্দিনের দিয়া, যা পরবর্তীতে কুতুবদিয়া নামে স্বীকৃতি লাভ করে। জেলার মূল কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগর দ্বারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় ১৯৮৫ সালে আদালত ভবনটি স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর হতে এই পর্যন্ত ৭ জন বিচারক এই আদালতে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে এই আদালতে একজন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্টেনো-টাইপিস্ট, একজন বেঞ্চ সহকারী, একজন জারিকারক এবং একজন অফিস সহায়ক কর্মরত রয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি:

ব্রিটিশ আমল থেকেই কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির যাত্রা শুরু হলেও ১৯০১ সালে মাত্র ৪ জন সদস্য নিয়ে সমিতিবদ্ধ হয়। ১৯১৭ সনের ১লা মে থেকে কার্যকর হয়। বর্তমানে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির নিজস্ব বিল্ডিং রয়েছে। বর্তমানে ৪৭জন মহিলা সদস্যসহ প্রায় ৭৫০ জন সদস্য অত্র বারে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন।